• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২১ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

ত্রিপুরার খাওরাবিলের অপরুপ যৌবন মুগ্ধ করে পর্যটকদের 


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: রবিবার, ০২ এপ্রিল, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০২:৫৩ পিএম
ত্রিপুরার মুগ্ধ করে পর্যটকদের 
খাওরাবিলের অপরুপ সৌর্ন্দয্য

অনুপম পাল,  ত্রিপুরা থেকে :  পর্যটন হল আপামর বাঙ্গালী জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ স্বরূপ। আর একটি আদর্শ পর্যটন কেন্দ্র সেই পর্যটনে এক অনন্য মাত্রা যোগ করে দেয়। প্রতিটি মানুষের কাছে নির্দিষ্ট কোন একটি পর্যটন কেন্দ্র থাকে যেখানে সে বারবার ফিরে যেতে তার মন চায় ভ্রমণ পিপাসুদের। 

বর্তমান যুগের ব্যস্ততা সর্বস্ব জীবনের ইঁদুর দৌড়ে আমাদের শরীর ও মন যখন রোজকার একই পরিবেশের ক্লান্তি এবং একঘেয়েমিতে ভরে ওঠে, তখন নিত্যদিনের সেই চেনা চারপাশ থেকে আমাদের মনকে কিছুদিনের জন্য বিশ্রাম দিতে এবং নিজের ক্লান্তি ও একঘেয়েমি দূর করে জীবনের পরবর্তী ব্যস্ততার জন্য তৈরি হতে প্রয়োজন ভ্রমণের। ভ্রমণ আমাদের বর্তমান জীবনের এমন একটি অংশ যাকে অস্বীকার করে কোনোভাবেই ভালো থাকা যায় না। ভ্রমণ আমাদের ক্লান্তি ও গ্লানিতে ভরে ওঠা মনকে পুনরায় কোন এক জাদুকাঠির ছোঁয়ায় সতেজ করে তোলে। মূলত শান্ত ও নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশই পছন্দ করেন ভ্রমণ পিপাসুরা,যেখানে একই সাথে পাওয়া যায় পাহাড়ের গাম্ভীর্য, নদীকুলের স্নিগ্ধতা আর অরণ্যের রোমান্স। 

জনসংখ্যার দিক দিয়ে তৃতীয় ক্ষুদ্র রাজ্য ত্রিপুরায় এমন যায়গার কোনো অভাব নেই। রাজ্যের বেশির ভাগ অংশই পাহাড় পর্বতে ঘেরা। অনেক যায়গায়ই সরকারী কিংবা বেসরকারী উদ্যোগে পর্যটন কেন্দ্রকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে। রাজ্যের প্রায় সর্বত্র  সরকারী ও বেসরকারী ভাবে কিছু কিছু পর্যটন কেন্দ্রের দিকে নজর পড়লেও রাজ্যের রাজধানী থেকে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত প্রত্নতাত্ত্বিক শহর কৈলাসহরের খাওরাবিলের দিকে এখনো নজর পড়েনি কারো!অনেকেই ভাবতে পারেন খাওরাবিল সেটা আবার কোথায়? প্রাচীনকালের ৭ তম শতাব্দী থেকে ত্রিপুরার রাজারা উত্তর ত্রিপুরাতে(বর্তমান ঊনকোটি জেলা) কৈলাসহর থেকে রাজ্য শাসন করতেন।

এক সময় রাঙাউটিতেই ছিলো রাজন্য আমলের রাজধানী। আর সেই রাঙাউঠির পাশেই প্রায় ২০০ কানি যায়গা জুড়ে গড়ে উঠেছে এই বৃহৎ আকারের মৎস চাষ কেন্দ্র। কৈলাসহরের সারা বৎসরের প্রায় ৮০ শতাংশ মৎসের যোগান এখান থেকেই হয়।তৎকালীন সময়ের টিসিএস অফিসার শ্যামলীনী ব্যানার্জী ৭০টি পরিবারকে নিয়ে একটি সমিতি গঠন করেন যার স্থাপনা হয় ২০০০ সালে। ২০০ কানি যায়গায় ভূমিখনন করে গড়ে তোলা হয় মৎস চাষ কেন্দ্র যার রেজিস্ট্রেশন হয় ২০০২ সালে। 

দীর্ঘ ২৩ বৎসর ধরে এই মৎস চাষ কেন্দ্রটি দেশ এবং দেশের বাইরে থেকে আসা অনেকেই ঘুরে গেছেন বহুবার। সরকারী কিংবা বেসরকারী ভাবে সাহায্য সহযোগীতা তেমনটা না পেলেও ধীরে ধীরে পর্যটকদের মনে যায়গা করে নিয়েছে এই মৎস চাষ কেন্দ্র। একসময় তৎকালীন উপমুখ্যমন্ত্রী বৈদ্য নাথ মজুমদার যে জল উৎসবের ঘোষণা করেছিলেন তাতে নীরমহলের পাশাপাশি স্থান পেয়েছিলো এই খাওরাবিল। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারনে ২০১৮ সাল থেকে আর পালন হচ্ছেনা এই জল উৎসব। এই জলাশয় থেকে অল্প কিছু দুরে রাঙাউটি এলাকায় একসময় অস্থায়ী রাজবাড়ী নির্মান করে সেখানেই থাকতেন মহারাজা ইন্দু মানিক্য, যার কিছুটা এখনো সেই এলাকায় গেলে চোখে পড়ে। আজও সেখানে রয়েছে বিশাল আকারের রাজার দীঘি। 

মহারাজা ইন্দু মানিক্য কৈলাসহরের খাওরাবিল এলাকা থেকেই উনি উনার রাজত্ব শাসন চালিয়েছিলেন বেশ কিছু সময়। খাওরাবিলকে পর্যটন স্থানে রুপান্তরিত করতে বাম সরকারের আমলে সমিতির পক্ষ থেকে অনেকবার লিখিত আকারে জানানো হলেও সরকার তখন কোনো হেলদোল দেখায়নি। বাম আমলের পর রাজ্যে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠিত  হওয়ার পরও সমিতির একদল প্রতিনিধি অনেক বার অনেক আধিকারিক ও নেতৃত্বদের সাথে খাওরাবিলকে পর্যটন কেন্দ্রে রুপান্তরিত করার পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ লিখিত আকারে করলেও এখন পর্যন্ত আন্তরিকতা দেখায়নি সরকার। চারিদিকে জলাশয় আর মাঝখানে দাড়িয়ে আছে একটি দ্বীপ। 

শীতে অনেকেই নৌকায় চড়ে এই দ্বীপের মধ্যে বনভোজন করতে আসেন কিন্তু উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকায় নানান অসুবিধায় পড়তে হয় এখানে আসা সকলকেই। কিছু দিন পূর্বে রাজ্যের ক্ষেত্র ও প্রচার মন্তনালয়ের আধিকারিক সুদিপ্ত কর, রাজ্যর অন্যতম সঞ্চালিকা সুতপা গুহ এবং ত্রিপুরার অন্যতম গ্রাফিক ডিজাইনার সমর্পণ ভট্টাচার্য্য সহ কৈলাসহরের প্রেস ক্লাবের বেশ কয়েকজন সদস্যদের নিয়ে সেখানে গেলে প্রকৃতি অপরুপ সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হন সকলেই। খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা খাওরাবিলের এই অপরুপ প্রাকৃতিক দৃশ্য অনেকেই ক্যামেরাবন্দী করে তাদের সামাজিক মাধ্যমে তুলে ধরেন।

সেই সময় সমিতির ম্যানেজার দুর্লভ নমঃ এর সাথে কথা বলে জানা যায়, সরকারী সাহায্য সহযোগীতা না থাকায় এখানে ঘুরতে আসা পর্যটক কিংবা প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য দ্বীপের মাঝেই গড়ে তুলছেন একটি পাকা ঘর, যার কাজ সবে মাত্র শুরু হয়েছে। 

তিনি আরও জানান এই পাকা ঘরের পাশেই তৈরী করা হবে আরেকটি রান্নাঘর এবং এছাড়াও নিজেদের উদ্যোগে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে গড়ে তোলা হবে ফুল বাগান ও হাওয়া ঘর। দুর্লভ বাবুর এই বক্তব্য শোনার পর কৈলাসহর প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে খাওরাবিলকে সাজিয়ে তুলতে এবং পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে কিছু দাবী মৌখিক আকারেই জানানো হয় জেলা শাসক ডঃ বিশাল কুমারকে। ডঃ বিশাল কুমার প্রেস ক্লাব সদস্যদের আবদারে সাড়া দেন এবং তিনি বলেন কিছু দিনের মধ্যেই সরকারী উদ্যোগে দ্বীপের মধ্যে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে কিছু আধুনিক আকারের ছোট ঘর করে দেওয়া হবে। তবে এক কথায় এটা বলা যেতে পারে খোলা আকাশের নিচে দাড়িয়ে প্রকৃতির অপরুপ যৌবন যা একটু আন্তরিকতায় হয়ে উঠতে পারে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। 

তবে অনেকদিন পরে হলেও জেলাশাসক ডঃ বিশাল কুমারের নজরে এই বিষয়টিকে প্রেস ক্লাব কতৃপক্ষের মাধ্যমে নিয়ে আশায় আগামী দিনে খাওরাবিল নতুন রুপে সেঁজে উঠবে বলেই ধারণা কৈলাসহরবাসীর।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image