নিউজ ডেস্ক : আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন । ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের মধুমতী নদীবিধৌত টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনা ।দেশের দীর্ঘ সময়ের প্রধানমন্ত্রী তিনি। টানা তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গৌরবও তার। ১৯৮১ সাল থেকে দেশের অন্যতম প্রাচীন দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আছেন। ৭৬ বছরের জীবনে অনেক সংকট, চড়াই-উতরাই পেরিয়েছেন। দেখেছেন সাফল্যের চূড়া। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন ও লম্বা সময় দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতা তার। তার শৈশব কেটেছে চিরায়ত গ্রামীণ পরিবেশে, দাদা-দাদির কোলেপিঠে। ’৫৪-এর নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা বাবা-মায়ের সঙ্গে ঢাকায় চলে আসেন। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে ছাত্রজীবন থেকে প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন তিনি।
বর্তমানে শুধু জাতীয় নেতাই নন, তিনি আজ তৃতীয় বিশ্বের একজন বিচক্ষণ বিশ্বনেতা হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন। সংগ্রামী জীবনে তাকে ১৯ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়। ১০ বার তাকে জেল-গৃহবন্দি থাকতে হয়েছে। মৃত্যুভয়কে পরোয়া না করে তিনি ক্লান্তিহীন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন দেশমাতৃকার জন্য। তার নেতৃত্বে অসংখ্য কালোত্তীর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বরের ভাষণের পদাঙ্ক অনুসরণ করে গত ২২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউএনজিএ অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেন।
তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশন এবং অন্যান্য উচ্চপর্যায়ের পার্শ্ব ও দ্বিপক্ষীয় অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে শনিবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছান। এবারও তার জন্মদিন কাটছে ওয়াশিংটনে। তার অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশে দিনটিতে উৎসবমুখর পরিবেশে নানা কর্মসূচি উদযাপন করবে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
রাজনীতি তার জন্মসূত্রে পাওয়া এক উত্তরাধিকার। শৈশব থেকেই তার পিতা বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক-সংগ্রামী জীবন দেখেছেন তিনি। ছাত্রজীবনে ছিলেন ছাত্রলীগের কর্মী, কলেজ ছাত্র সংসদের সহসভানেত্রীও নির্বাচিত হয়েছেন। এই ছিয়াত্তর বছরের অর্ধেকেরও বেশি সময় ধরে তিনি নৌকা প্রতীকের হাল ধরে আছেন। সঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের। চার মেয়াদে সরকারপ্রধান হিসেবে দেশের হাল ধরে আছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নারীনীতি প্রণয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণসহ অসংখ্য ক্ষেত্রে যুগান্তকারী সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ আজ বিশ্বসভায় নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছে সক্ষম রাষ্ট্রের মূর্ত প্রতীক হিসেবে।
সংগ্রামমুখর জীবন শেখ হাসিনার। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকের নির্মম বুলেটে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। এ সময় বিদেশে থাকায় আল্লাহর অশেষ রহমতে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। ১৯৮১ সালের ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। জাতির এক ক্রান্তিলগ্নে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ডাক আসে দেশমাতৃকার হাল ধরার। সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন শেখ হাসিনা। জেলজুলম, অত্যাচার কোনো কিছুই তাকে তার পথ থেকে টলাতে পারেনি এক বিন্দু।
আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত, সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ, কল্যাণকর ও নিরাপদ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি জলবায়ুসহিষ্ণু বদ্বীপ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘ডেলটাপ্ল্যান-২১০০’ ইতিমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে অনন্য ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে পরপর তিন বার এবং এ পর্যন্ত চার বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি সম্পাদন, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতিসহ জাতীয় জীবনের বহু ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছেন শেখ হাসিনা। বিশ্বে যখন সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে পড়ছে, তখন সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল হয়ে উঠেছে শেখ হাসিনার কঠোর অবস্থানের কারণে।
আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় আজ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন পালন করবে। তার অনুপস্থিতিতেই দিনটি উৎসবমুখর পরিবেশে নানা কর্মসূচি পালন করা হবে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ আজ বেলা ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে আলোচনাসভার আয়োজন করেছে।
ঢাকাসহ সারা দেশে সব সহযোগী সংগঠন আলোচনাসভা, দোয়া মাহফিল, বিশেষ প্রার্থনা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ দিবসটির তাৎপর্য অনুযায়ী বিভিন্ন উপযোগী কর্মসূচি উদযাপন করবে।শুক্রবার ঢাকাসহ সারা দেশে সব সহযোগী সংগঠন আলোচনাসভা, শোভাযাত্রা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ দিবসটির তাৎপর্য অনুযায়ী বিভিন্ন উপযোগী কর্মসূচি পালন করবে।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: