এম.এম হক :
ডিজিটাল বাংলাদেশে আধুনিক পুলিশ বাহিনী গড়ে উঠলেও কতটুকু মানবিক হয়ে উঠতে পেরেছে সেটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পুলিশ একটি সেবামূলক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। আইনশৃংখলা সুরক্ষা, মানুষের সার্বিক নিরাপত্তা ও সহায়তা, দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন এবং দেশজুড়ে অভয় পরিবেশ নিশ্চিত করাই পুলিশের উল্লেখযোগ্য প্রধান দায়িত্ব।
যাপিত জীবনে সামাজিক সুরক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাগরিক জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। সবকিছুর মূলে আইনের শাসন, এক কথায় সুশাসন জরুরী।
নদীবেষ্টিত গফরগাঁও উপজেলায় দস্যু, তস্করের আনাগোনা সব সময়ই ছিল। আমাদের রেলপথ ও বিস্তৃর্ণ চরাঞ্চল এসব অপরাধীদের অনেকটা সহায়ক বলে জানা যায়। আশপাশের এলাকার দুস্কৃতিকারী ও চলতি পথের অপরাধীরা বরাবরই গফরগাঁওয়ের দুর্নাম করেছে ঢালাওভাবে।
ঐতিহ্যগতভাবে আমরা প্রতিবাদী, অপরাধী নই। তবে অপরাধীর ক্ষেত্রে আইনের কঠোর প্রয়োগের বিকল্প নাই। হাল সময়ে গতানুগতিক পরিবেশের বাইরে এক অন্যরকম পুলিশ প্রশাসন প্রত্যক্ষ করছে গফরগাঁও থানার বাসিন্দারা। এ পুলিশ সজ্জন, সহৃদয়, মানবিক এবং বিপদাপদে প্রকৃত বন্ধু-স্বজনের মতো।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে গফরগাঁও থানার আইনশৃংখলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক এবং অতীতের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। এর পেছনের কারিগর এক মানবিক ও করিৎকর্মা পুলিশ কর্মকতা অফিসার ইনচার্জ তথা টিম ফারুক আহম্মেদের।
ওসি ফারুক আহম্মেদ জানায়,গফরগাঁও থানা পুলিশের আপ্রাণ চেষ্টা মানুষের পাশে থাকার। স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা সুরক্ষায় পুলিশ সদস্য সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখছে। ওসি (অপারেশন) ফারুক আহম্মেদ ও ওসি (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন নিজেদের মাঝে ভারসাম্য বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করছেন।
এই টিমের উল্লেখযোগ্য সাফল্য হচ্ছে, বাল্যবিয়ে, ইভ টিজিং, মাদক, জুয়া, সাইবারক্রাইম, যৌতুক, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করেছে গফরগাঁও থানা পুলিশ।
বাল্যবিয়ে, ইভ টিজিং, সাইবারবুলিং, যৌতুক, নারী ও শিশু নির্যাতন নিয়ে কাজ করেন বেসরকারি সংস্থা ব্রাক এবং উপজেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়। এই দুই কার্যালয়ের সমীক্ষা ও পরিসংখ্যানে দেখা গেছে পুলিশের তৎপরতায় বাল্যবিবাহ,ইভটিজিং ও নারী নির্যাতনের ঘটনা ১ শতাংশে নেমে এসেছে।
স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা জানান, এসবের পেছনে রয়েছে শিক্ষক,শিক্ষার্থী ও অভিবাকদের সচেতনতা।
বিগত পনের মাসে গফরগাঁও থানা পুলিশ সংশ্লিষ্ট ৭টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সচেতনতামূলক সভা করেছেন। সেই সাথে বিট পুলিশিং ও কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমকে করেছেন বেগবান।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা খালেদা আক্তার বলেন, গফরগাঁও থানা পুলিশের সার্বিক সহযোগিতায় আমাদের এখানে বাল্য বিয়ে ও ইভটিজিং এর মতন সামাজিক অপরাধ অনেক কমে গেছে।
ওসি ফারুক আহম্মেদ টিম লিডার হয়ে প্রথম যুদ্ধ শুরু করেন মাদকের বিরুদ্ধে। উল্লেখযোগ্য আরও একটি সাফল্য মাদকমুক্ত গফরগাঁও থানা।
সাধারণ ডায়েরী, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, মামলা কিংবা যে কোনো ধরনের নাগরিক সেবা পেতে টাকার প্রয়োজন হয়না। ঝামেলা ছাড়াই ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কোনো পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেয়ে যাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে পুলিশি সেবা পেতে পারেন অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসেও।
গফরগাঁও থানার ওসি (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন বলেন, সময় পাল্টেছে মানুষের ধারনাও পাল্টাতে হবে। এখন অনেক মেধাবী ও উচ্চশিক্ষিতরা পুলিশ বিভাগের গর্বিত সদস্য। বাংলা নাটক সিনেমায় পুলিশকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়,যা খুবই দুঃখজনক ও নেতিবাচক।পুলিশ জনগণের বন্ধু ও সেবক।
স্থানীয়ভাবে অপরাধপ্রবনতা কমে গেছে অনেকাংশেই। তবুও কিছু ক্রাইম ফিকশন সিরিয়াল,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার অপরাধ উস্কে দেয়। এমনই একটি ঘটনার সমাধান করে পুলিশ এসব জানতে পারে।
গফরগাঁও থানায় চাঞ্চল্যকর প্রবাসীকে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির দুটি ঘটনায় টিম ফারুক আহম্মেদ ছদ্মবেশ ধারণ করে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ভিকটিমকে উদ্ধার ও আসামী গ্রেপ্তার করে পুলিশ বিভাগে আলোড়ন তুলেছেন। সংবাদপত্রে প্রকাশিত গফরগাঁওয়ের স্থানীয় সংবাদ থেকে জানা যায়, আলতাফ গোলন্দাজ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী দিপালী আক্তার পার্শ্ববর্তী ভালুকা উপজেলার বাসিন্দা।
পরীক্ষার আগের রাতে তিনি মোবাইল ফোনে ওসির কাছে অভিযোগ করেন তাঁর প্রাক্তন স্বামী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দিবেনা। বিষয়টি আমলে নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশের আগেই পুলিশের টিম হাজির হয়ে নিরাপত্তা প্রদান করে পরীক্ষা শেষে ওসি ফারুক আহম্মেদ পুলিশের গাড়িতে করে ওই শিক্ষার্থীকে বাড়ি পেঁছে দেন।
এমন অসংখ্য ঘটনার নজির ওসি ফারুক আহম্মেদ এই থানায় যোগদানের পর রেখেছেন।
বিদ্যুতের বকেয়া বিল নিয়ে মামলায় গ্রেপ্তার হন জনৈক গ্রাহক। এরপর তাঁর স্ত্রী ছুটে আসেন থানায়। স্ত্রী বয়ান করলেন যে,তাঁর স্বামী মরণব্যাধী ক্যান্সারে আক্রান্ত। কাজকর্ম করার সক্ষমতা নাই। খোজঁ নিয়ে বিষয়টির সত্যতা জানতে পারেন ফারুক আহম্মেদ। সাথে সাথেই পুলিশের বৃত্তের বাইরে এস মানবিকতার সাক্ষর রাখলেন এই ক্যান্সার রোগীর পরিবারের জন্য।
বকেয়া বিদ্যুৎ বিলে মোটা অংকের টাকা চাঁদা তুলে এবং নিজের বেতনের টাকা থেকে দিয়ে পরিশোধের ব্যবস্থা করেন। সেই সাথে কিছু চিকিৎসা খরচের যোগান দেন। এছাড়াও অসংখ্য দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীকে আর্থিক সহায়তা,হতদরিদ্রদের চিকিৎসাসেবা,খাদ্যের যোগান দিয়েছেন এই মানবিক পুলিশ কর্মকর্তা।
গফরগাঁও থানার ওসি ফারুক আহম্মেদ এর ভাষ্য, পুলিশকে মানুষের আশা-ভরসার জায়গা বানাতে চেয়েছি। আমাদের বিশ্বাস, ভবিষ্যতে পুলিশ মানুষের আরো কাছাকাছি আসতে পারবে, নাগরিক বান্ধব হয়ে উঠবে এবং জনগণের প্রকৃত সেবক হবে।
এই ব্যতিক্রমী ভূমিকা, এই সেবামূলক মনোভাব ও আচরণের জন্য আমরা পুলিশকে জানাই সশ্রদ্ধ অভিভাদন।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: