নাজমুল হোসেন, নিজস্ব প্রতিবেদক : লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুরসহ ৫ উপজেলায় ১৫ দিনের টানা বর্ষণ ও চলমান বন্যায় কৃষিখাতে ২'শ ২৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এক লাখ ৫৭ হাজার ২'শ ৯ কৃষক।
সবচেয়ে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন হয়েছে আউশ ধান, আমনের বীজতলা, রোপা আমন ও সবজি ক্ষেতের। এছাড়া পান, আখ, হলুদ, আদা এবং নানা জাতের ফলের গাছেরও ক্ষতি হয়েছে।
মঙ্গলবার লক্ষ্মীপুর জেলা ও পাঁচ উপজেলাগুলো কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনার আওতায় আনার কথা জানিয়েছেন লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি বিভাগ।
লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, লক্ষ্মীপুরের ৫ উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৩ হাজার ৬'শ ৭ হেক্টর জমিতে আমনের বীজতলা তৈরি করা হয়েছিল। বন্যা, ১৫ দিনের টানা বর্ষণের ফলে জলাবদ্ধতা ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে ২ হাজার ৫'শ ৩৬.৮০ হেক্টর জমির বীজতলা পচে নষ্ট হয়ে গেছে। যা মোট বীজতলার ৭০ ভাগের বেশি। এতে ৬৩ হাজার ৪'শ ২০ জন কৃষকের ২৯ কোটি ২৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়।
রোপা আমনের আবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ৩'শ ৯৪ হেক্টর জমিতে। পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে ৭ হাজার ৬'শ ১০.৭০ হেক্টর জমির রোপা আমন। যা আবাদ করা মোট জমির ৫৩ ভাগ। এতে ৩১ হাজার ৭'শ ৬ জন কৃষকের ৮৫ কোটি ৬২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়।
২৪ হাজার ৪'শ ২৩ জন কৃষকের ৪ হাজার ৭০.৫০ হেক্টর জমির আউশ ধান নষ্ট হয়। এতে ক্ষতি হয় ৩৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকার।আমনে ৯ হাজার ৭'শ ২০ জন কৃষকের ১ কোটি ২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়।
বন্যায় ১০ হাজার ৩'শ ৯০ হেক্টর জমির শরৎকালীন শাক-সবজি নষ্ট হয়। যা আবাদকৃত জমির শতভাগ। এতে ২০ হাজার ৭'শ ৮০ জন কৃষকের ৫১ কোটি ৯৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। পান নষ্ট হয় ১'শ ১২.২ হেক্টর জমির। এতে ১ হাজার ৬'শ ৬৩ জন কৃষকের ক্ষতি হয়১৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকার।
২'শ ৪০ জন কৃষকের ৮৩.৩৩ হেক্টর জমির আদা নষ্ট হয়। ক্ষতি হয়েছে ৭০ লাখ টাকার।
৩৯ হেক্টর জমিতে থাকা ৯৮ মেট্রিক টন হলুদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ২ হাজার ৪০ জন কৃষকের ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়।
৭'শ ৪৪ জন কৃষকের ৯.৩ হেক্টর জমির আখ নষ্ট হয়েছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ ২ কোটি ৯ লাখ টাকা। ২ হাজার ৭৩ জন ফল চাষির ৪১.৪৬ হেক্টর জমির ফল বাগান নষ্ট হয়েছে। এতে ২'শ ৭ মেট্রিক টন ফলের ক্ষতি হয়। যার বাজার মূল্য ২ কোটি ৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
রায়পুর এলাকার কৃষক মনিরুজ্জামান বলেন, শুধু আমার ফসলের ক্ষেতই না। চরাঞ্চলের হাজার-হাজার একর জমির ফসলের মারাত্নক ক্ষতি হয়।
লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সোহেল মো. শামসুদ্দীন ফিরোজ বলেন, চলমান বন্যা, বৃষ্টিপাতে জলাবদ্ধতা এবং পাহাড়ি ঢলের কারণে ফসলি জমিতে পানি জমে গেছে। কৃষকের আমনের বীজতলা, রোপা আমন ক্ষেত, পান, সবজি ও ফলের গাছ নষ্ট হয়। যার মূল্য প্রায় ২'শ ২৭ কোটি টাকা।
আমরা ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। দ্রুত কৃষকদের মধ্যে যাতে পুনর্বাসন প্রণোদনা দেওয়া হয়, কর্তৃপক্ষ সে নির্দেশনা দিয়েছে। আমরা ৬ হাজার কৃষকের মধ্যে আমন ধানের বীজ ও সার বিতরণ করেছি। তাদের অ্যাকাউন্টে ১ হাজার টাকা করে সহায়তা হিসেবে দেওয়া হয়।
লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সোহেল মো. শামসুদ্দীন ফিরোজ আরও বলেন, আগাম রবি মৌসুমের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ হাতে পেয়েছি। ১৩ হাজার ২'শ কৃষকের মধ্যে গম, ভুট্টা, সরিষা, সূর্যমুখী, মুগ, মসুর, খেসারি, চিনা বাদাম, সয়াবিন, শীতকালীন পেঁয়াজ বীজ বিতরণের জন্য কর্মসূচি আসবে।
আমন ধান চাষিদের উদ্দেশে লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সোহেল মো. শামসুদ্দীন ফিরোজ আরও বলেন, আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমন ধানের চারা লাগানো যাবে। তারা যেন নাভি জাতের বিআর-২২, বিআর-২৩ ধানের চারা রোপণ করে।
এছাড়াও আমরা যে বীজ দিয়েছি, বিআর-৭৫, বিআর-১৭, এ দুটা বীজ দ্রুত কাদাযুক্ত মাটিতে বপন করলে ১৫ দিনের চারা জমিতে রোপণ করতে পারবেন। এ জাতের ধানে নির্দিষ্ট সময়ে ভালো ফলন হয়।
৬৫ হাজার কৃষকের জন্য প্রণোদনা হিসেবে শীতকালীন সবজির চাহিদা পাঠিয়েছি ওপর মহলে। তারা যাতে বাড়ির আঙ্গিনায় শীতের সবজি চাষ করতে পারেন, সে জন্য সহযোগিতা করা হবে। আমরা কৃষকদের জন্য যতটুকু করণীয়, তা করার জন্য তৎপর আছি।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: