নিউজ ডেস্ক: গত কয়েকদিনের অবিরত হালকা ও ভারী বর্ষণ, পাহাড়ি এবং ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে বন্যা প্লাবিত হচ্ছে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা। এ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ অঞ্চল এখন পানির নিচে। বন্যায় বাড়িঘর, রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া পৌরসভার বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও দোকানপাটে পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘরের ভেতর পানি উঠায় মঙ্গলবার (১৮ জুন) রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ১৭২টি পরিবারের মানুষ।
উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ২২টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে টিলা ধ্বসে পড়ার আশঙ্কায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবসাকারী পরিবারকে নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে।
বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাজরাতুন নাঈম মঙ্গলবার (১৮ জুন) রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকানিউজকে বলেন, ‘উপজেলায় ২২টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র আগে থেকেই প্রস্তুত রাখা ছিল। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ১৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৭২টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। এদের মাঝে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। বন্যা দুর্গতদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরণের সহযোগিতা প্রদান করা হবে।’
এদিকে ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে বন্যা পরিস্থিতি। আবহাওয়া দফতরের সতর্কীকরণ অনুযায়ী, আগামী দুইদিন সিলেট বিভাগসহ মৌলভীবাজারে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে বড়লেখার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
জানা গেছে, গত দুদিন থেকে বড়লেখায় অবিরত হালকা-ভারী বর্ষণ, পাহাড়ি এবং ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে বড়লেখা পৌর এলাকার বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও দোকানপাট পানি ঢুকেছে। এছাড়া বড়লেখা-কুলাউড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে পানিতে যান চলাচল ব্যাহত হয়।
মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি ঝরেছে। ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে উপজেলার তালিমপুর, বর্ণি, সুজানগর, দাসেরবাজার, উত্তর শাহবাজরপুর, নিজবাহাদুরপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে পানি উঠেছে। এতে প্রায় ৫ সহশ্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ঘরে ঠিকতে না পেরে অনেকে আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটছেন। এছাড়া বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণ রাস্তা পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের আশ্রয় কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, ২টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১৯টি পরিবার উঠেছেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ও ইউপি সদস্য মকসুদ আহমদ রানা আশ্রিতদের খোঁজ খবর রাখছেন।
উত্তর শাহবাজপুর ইউপির চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে পানি ঢুকেছে। এরমধ্যে ৭ ও ৮ নং ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত। সবমিলিয়ে ১ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ২টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১৯টি পরিবার উঠেছেন। এসব পরিবারগুলোকে আমরা খিচুড়ি রান্না করে খাইয়েছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া পাদদেশ ঝুঁকি নিয়ে বসবসাকারী পরিবারগুলোকে নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে।’
বর্ণি ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘আমার পুরো ইউনিয়ন বন্যায় আক্রান্ত। বড়লেখা সদরের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন। আমার ইউনিয়নের মানুষের জীবন প্রায়ই অচল। প্রায় ২০০ পরিবার পানিবন্ধি রয়েছে। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এরইমধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রে ১৫-২০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। সরকারিভাবে এখনও কোনো খাদ্যসহায়তা মেলেনি। তবে আমরা প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়েছি।’ পানি বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করবে বলে জানান তিনি।
তালিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান এখলাছ উদ্দিন জানান, তার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে পানি ঢুকেছে। কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে বেশ কয়েকটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন।
বড়লেখা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঢলের পানিতে ১৭৪ হেক্টর আউশ ধান এবং ৭ হেক্টর গ্রীস্মকালীন শাক-সবজি নিমজ্জিত রয়েছে। পানি আরও বাড়লে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে।’
ঢাকানিউজ২৪.কম / এসডি
আপনার মতামত লিখুন: